কিছুদিন ধরেই গোপন শলা পরামর্শ করছিল যুবরাজ আর ইয়েচোর। যুবরাজ বললেন, 'গোয়েন্দা রিপোর্ট দেখেছি এবারের, পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মমতা- ঝড় বইবে, লোকসভা- বিধানসভার মতই। শুকনো মুখে ইয়েচোর মাথা নেড়ে বললেন, হ্যাঁ। আমাদের পার্টির রিপোর্ট, সংবাদ মাধ্যমের সমীক্ষা সবই তৃণমূলের পক্ষে। বিস্তর আলোচনার পরে ব্লু-প্রিন্ট তৈরী হল। কমিশনকে কাজে লাগাতে হবে এমনভাবে যেন পঞ্চায়েত নির্বাচন বিলম্বিত, দীর্ঘায়িত ও বিঘ্নিত হয়। এই ছক আনুযায়ী দ্রুত পরপর পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হল। দাবী করা হল- নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষনা, যাবতীয় আয়োজন, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ইত্যাদি সব কিছু কমিশনের নির্দেশ আনুযায়ী হবে। আইনি প্রশ্ন উঠল। দিন ঘোষণার ক্ষমতা যে রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। আর কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন? জঙ্গল মহলের মাওবাদি তৎপরতা আর পাহাড়ের অশান্তি তো দমন করা গেছে। গোপন ছক আনুযায়ী কমিশন গেল হাই কোর্টে। প্রাথমিক সাফল্য পেল। যদিও প্রশ্ন উঠল না- ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৬৩ জন খুন হওয়া সত্ত্বেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আধা-সামরিক বাহিনী রাজ্যে মোতায়েন হয়নি কেন? কেনই বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবীতে গত নির্বাচনে কমিশন হাই কোর্টে যায়নি? যাই হোক আপিল হল। হাই কোর্ট বললেন, দুইপক্ষের সম্মতিক্রমে রায় দেওয়া হল। পরে কমিশনের কৌঁসুলি জানালেন তিনি রায় শুনতেই পাননি। সুতরাং সম্মতির প্রশ্নই ওঠেনা। এই আজব বধিরতার অছিলায় আবার শুনানি চলল। কেন্দ্রীয় সরকার বলল, বাহিনী দিতে পারব না। সারাদেশে স্থানীয় নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পূর্ব নজির নেই। তাছাড়া উত্তরাখন্ডে, ছত্তিশগড়ে প্রচুর বাহিনী পাঠানো হয়েছে, ইত্যাদি। সবাই বাহবা দিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের এই সাফ যুক্তিতে। কিন্তু আসলে এ ছিল ষড়যন্ত্রেরই অঙ্গ। চোরকে বলা হল-
'আগুন লাগাও'। আর গেরস্তকে বলল,
'সাবধান থেকো'। রাজপ্রমুখও হঠাৎ অতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি নাকি মধ্যস্থতা করছেন! কার হয়ে মধ্যস্থতা করছেন? কমিশনের জন্য নাকি অগণিত বাংলার মানুষের জন্য? ওদিকে শুনানি চলছেই। নির্বাচন ছক অনুযায়ী বিলম্বিত হচ্ছে। একসময় বোঝা গেল, আদালত সব দিক বজায় রেখে রায় দিতে চলেছে। মূল উদ্দেশ্য, মানুষ যেন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু ইতিমধ্যে মীরাবাহিনী গোপনে রাজধানী সফর করে এসেছেন। সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। যেদিন হাইকোর্ট রায় দেবে সেদিনই সর্বোচ্চ আদালতে উল্লেখ করা হল মৌখিকভাবে। এমনই এক অদ্ভুত প্রক্রিয়ার মধ্যে মামলা চলে গেল সর্বোচ্চ আদালতে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দফা রফা হল। পাঁচ দফায় ভোট। রমজান মাস, বর্ষা, বন্যা কোনও কিছুই বিচারে আমল পেল না। মুসলিম ভোট কম পড়লে তৃণমূল দলের ভোট কমবে। আর বর্ষায়, বন্যায় বহু মানুষ ভোট দিতে পারবে না। ভোটের হার কমে যাওয়া মানে ক্ষতি তৃণমূলেরই। এই ছিল ষড়যন্ত্র, যা এখন বিভিন্ন মহলে আলোচনার বিষয়। তা বলে এই চক্রান্ত কি সবটাই একই সূত্রে বাঁধা? হ্যাঁ, তাই-ই।
কোনদিন শুনেছেন রাজ্যের একটা কমিশন নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে এমন নিরবচ্ছিন্নভাবে মামলা চালিয়েছে এবং জনগণের অর্থে? কিন্তু আদালতের আদেশ তো অদের পক্ষেই গেল। মানুষের অসুবিধে বিচার করা হল না। যাবেই তো। আমরা যে শিবঠাকুরের দেশের নাগরিক। সুকুমার রায়ের
'আবোল-তাবোল' পড়েন নি?
এদেশে অনেকের চাকরি শেষ হয়েও হয় না। অবসরের পরের দিনই নতুন চাকরির আগাম ব্যাবস্থা থাকে। বয়স ৬০/৬২/৬৫ পেরলেও ডজন ডজন কমিশনে পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা আছে। রাজ্যপালের পদ আছে। রাজ্যসভার আসন আছে। রাষ্ট্রদূতের হাতছানি আছে। আরও কত কিছু!
সুতরাং কেন্দ্রের ক্ষমতায় যারা আছে তাদের কথা শুনলে লাভ বই ক্ষতি তো কিছু নেই। তা কমিশনারই হোন বা ধর্মাবতার। চাকরির মেয়াদ-উত্তীর্ণ নানা চাকরি তো এদেরই জন্য। কিন্তু ষড়যন্ত্র যাই হোক না কেন, রমজান/বর্ষা/বন্যাকে মেনে নিয়ে আধিকাংশ ভোটারই ভোট দেবেন। কারন, এবার যে তাদের গ্রামে গ্রামে, জেলায় জেলায় নিজেদের সরকার গড়ার পালা। গত লোকসভা নির্বাচনে যে পালাবদল শুরু হয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তার ব্যাতিক্রম ঘটবে না। ইয়েচোর-যুবরাজরা যতই গোপনে নির্বাচন বানচাল করার খেলা খেলুক, বাংলার মানুষ মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে ইতিমধ্যে খেলা ভাঙার খেলা শুরু করে দিয়েছেন। শেষ দিনটি তাই হবে ভয়ঙ্কর।